আবারো বাড়ছে ঔষধের দাম

প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩ | আপডেট: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ,

চাল, ডাল, তেলসহ বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এ অবস্থায় কয়েক দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় ফের বেড়েছে ঔষধের দাম। জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে ঔষধের দাম বেড়েছে বলে জানায় ঔসধ ব্যবসায়ীরা। সাধারন মানুষ বলছে ঔষধের দাম বাড়ানো মানে সাধারণ মানুষের জন্য ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রায় দেড় হাজার জেনেরিকের ২৭ হাজারেরও বেশি ব্রান্ডের ঔষধ তৈরি হয়। এগুলোর মধ্যে কেবল ১১৭টি ঔষধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রন করতে পারে। এর বাইরে যে ঔষধ গুলো রয়েছে তা নির্ধারন করে ঔষধ কোম্পানি গুলো।

ঢাকার মিটফোর্ড পাইকারি ঔষধ ফার্মেসির মালিক নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক ঔষধের এই দাম বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এখন তো অর্থনৈতি ও তেমন অবস্থায় নেই। বাজারে সকল কিছুর দাম বৃদ্ধি। ঔষধের দাম বাড়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ঔষধের মধ্যে যে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয় তার দাম বেড়েছে বলে শোনা যায়, আমি সঠিক কারন জানিনা যে কেন বাড়ছে।

ঔষধের দামের প্রসঙ্গে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ঔষধের দামটা আসলে থেমে নেই। কিছুদিন আগেও দাম বেড়েছিল। কিন্তু এখন আবার ঔষধের দাম বাড়তির দিকে। কিছুদিনের মধ্যে ঔষধের দাম আরো বাড়তে পারে। কিছু ঔষধ ব্যবসায়ী আছে যারা দাম বাড়ার আসায় ঔষধ মিটফোর্ডে স্টক করছেন।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ঔষধের দামে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এখন পযন্ত ঔষধের দামের কোনো প্রভাব পড়েনি। কারন দামের বিষয়টা পুরোপুরি নির্ভর করে বাহিরে থেকে আসা কাচাঁমালের ওপর। তবে কাচাঁমালের আমদানি রফতানিতে কিছুটা প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে আবার ডলারের দামও বেড়েছে। যে ঔষধগুলো মানুষ বেশি কেনে, সেগুলোরই দাম বেড়েছে

এই প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন নামক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ার বিষয়টা মূলত কাচাঁমালের ওপর নির্ভর করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু কাচাঁমালের দাম বাড়ায় অনেক বছর ধরে সরকার ঔষধের দাম বাড়ানোর চেষ্টায় ছিল। শেষপর্যায়ে এসে সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঔষধ কিনতে আসা নাছিমা বেগম বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের প্রায় সবকিছুই দাম বেড়েছে। এখন আবার দ্বিতীয় দফায় ঔষধের দাম বাড়ছে এতে সাধারন মানুষ করবে কী ? কোথায় যাবে ? মধ্য ও নিস্ন মানষের সংসার চালাতে এখন হাঁষফাঁস খাচ্ছে। এ অবস্থায় ঔষধের দাম বাড়লে সাধারন মানুষ রোগে ভুগে মারা যাবে। যাদের ক্ষমতা আছে, ব্যাংকে টাকা আছে তাদের জন্য খুব বেশি সমস্যা হবে না। কিন্তু যারা দিন আনে দিন খায় তাদের ঔষধের পিছনে বাড়তি টাকা খরচ করার উপায় নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ঔষধের দাম বাড়াটা আসলে এটা মধ্যবিত্তদের জন্য এক ধরনের হয়রানি ও জুলুমের মতো। বেশি টাকা দিয়ে ঔষধ কিনতে হলে নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল-ডাল কিনা বন্ধ করতে হবে। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। নয় তো চিকিৎসা খরচ বন্ধ করে দিতে হবে। চাকরীজীবী হিসেবে আমাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। সেখানে গরিব মানুষ, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তাদের অবস্থা কী হবে ? মানুষ তো এখন তিন বেলার জায়গায় দুবেলা খেয়ে আছে। নতুন করে ঔষধেরঔষধের দাম মানুষ তো ধুকে ধুকে না খেয়ে মারা যাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মো. শাহজাহান খান বলেন, ইতিমধ্যে এসেনসিয়াল ৫৩ প্রকারের ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কাঁচামালে খরচ বৃদ্ধির কথা বলে সব কোম্পানি ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। ওষুধের দাম বৃদ্ধি হলে যেমন ক্রেতার বেশি টাকা লাগে, তেমনি ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও পুঁজির পরিমান দ্বিগুন হয়ে যায়। এমনিতেই কোভিডের কারণে দেশের পরিস্থিতি নাজুক, সাথে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে এর মধ্যে ওষুধের দাম বৃদ্ধি জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলবে।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *