স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত সেলাই মেশিন আজও গৌরবের অংশ হিসেবে সংরক্ষিত আছে

প্রকাশিত: ৮:৪০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২৩ | আপডেট: ৮:৪০ অপরাহ্ণ,

হীমেল কুমার মিত্র

স্টাফ রিপোর্টার

১৯৭১-এর মার্চে পুরো পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর ছিল। বাঙালির স্বাধীনতার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১ম ধাপ ছিল ২ মার্চ ঢাকার রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন। সে পতাকার আদলে ১৭ মার্চ কুড়িগ্রামেও উত্তোলন করা হয়েছিল জাতীয় পতাকা। সেদিন পতাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত সেলাই মেশিন আজও গৌরবের অংশ হিসেবে সংরক্ষিত আছে।

ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে আনা পতাকার একটি নমুনা সফিকুল ইসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন মন্জু মণ্ডল। সেই পতাকার আদলে নতুন পতাকা তৈরি করে তা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেন কুড়িগ্রামের ছাত্রনেতারা। কিন্তু অভিজ্ঞ দর্জি ছাড়া এ কাজ সহজ ছিল না। আবার অভিজ্ঞ হলেও অনেকেই দণ্ডের ভয়ে সেটি সেলাই করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরে ১৬ মার্চ কুড়িগ্রামের তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা রুকুনুদ্দৌল্লা কুড়িগ্রাম বাজারের দর্জি পলাশবাড়ীর মজিবর রহমানকে দিয়ে অতি গোপনে মানচিত্রখচিত পতাকাটি সেলাই করে নেন। পরদিন ১৭ মার্চ সেটি চিলড্রেন পার্কে ছাত্রনেতা শুভাংশু চক্রবর্তী, আমিনুল ইসলাম, মন্জু মণ্ডল, রুকুনুদ্দৌল্লা মণ্ডল, তপন কুমার রুদ্দ, মৃণাল কান্তি রায়, হারুন-অর-রশিদ লাল, নুর-ই-ইসলাম, মোকারব হোসেন, সাচ্চু, কাজল, সাজু ও নুর উন নবী উপস্থিত থেকে মোস্তফা কামাল তুষার নামে তৎকালীন ডিবি কর্মকর্তার শিশুছেলেকে দিয়ে সেই পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন।

সেদিন ছাত্রনেতারা নিজেদের শরীরে সুঁই বিদ্ধ করে রক্তশপথ নিয়েছিলেন। সেদিন মজিবর দর্জি এ সেলাই মেশিন দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা তৈরি করেছিলেন, যা কুড়িগ্রামে উত্তোলন করা প্রথম জাতীয় পতাকা। সেলাই মেশিনটি তার ছেলে মোজাম্মেল হক উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে উপহার দিয়েছেন, যা নতুন শহরে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের অস্থায়ী প্রদর্শনী কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও আঞ্চলিক ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা এ জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন।

তিনি জানান, কুড়িগ্রামে ঢাকা থেকে আনা পতাকার আদলে যে পতাকাটি বানানো হয়েছিল, তা জাদুঘরে রাখা এই সেলাই মেশিনে তৈরি। ১৯৭১ সালে জেলা শহরের পলাশবাড়ী এলাকার দর্জি মজিবর রহমান এটি তৈরি করেছিলেন। দর্জির মৃত্যুর পর সেলাই মেশিনটি ঘরের ছাদে রাখা ছিল। পরে দর্জি মজিবর রহমানের ছেলে মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে সেলাই মেশিনটি সংগ্রহ করে জাদুঘরে রাখা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পতাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই এ সেলাই মেশিনটি খুবই জরুরি।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *