৫ আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটেছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার। ঠিক এক বছরের মাথায়, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ একই পরিণতির শিকার হলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকেই নেপালে এই আন্দোলনের সূচনা। দ্রুতই তা রূপ নেয় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণে। কাঠমান্ডুতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন নিহত হলেও দমন-পীড়ন আন্দোলনকে থামাতে পারেনি। বরং তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার পথ হারিয়ে ফেলেন অলি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে যেভাবে তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, নেপালেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রজন্ম জেডের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলন “#Nepokids” হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জনরোষকে একত্রিত করেছে।
বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার ইস্যু দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে উসকে দেয়। একইভাবে নেপালে ধনী-গরিব বৈষম্য ও রাজনৈতিক পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে।
বাংলাদেশে দেড় হাজারের বেশি প্রাণহানি, নেপালে ১৯ জনের মৃত্যু—দুই দেশেই আন্দোলন দমাতে সরকারি বাহিনীর কঠোরতা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার মতোই কেপি শর্মা অলিকেও ক্ষমতা ছাড়তে হলো।
বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ যেমন একসময় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল, পরে সেই দলকেই আন্দোলনের মুখে সরে যেতে হয়েছে। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনিফাইড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) রাজতন্ত্রের পতনে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও আজ তারাই জনরোষের শিকার। ইতিহাস যেন এক করুণ পুনরাবৃত্তি হয়ে ফিরে এলো।