কাতারে জরুরি আরব–ইসলামিক সম্মেলন, ‘যৌথ আরব বাহিনী’ গঠনের প্রস্তাব:“এই জোটের উত্থানের আগেই মৃত্যু হবে” মন্তব্য

প্রকাশিত: 8:49 am, September 17, 2025 | আপডেট: 8:49 am,

কাতারে জরুরি আরব–ইসলামিক সম্মেলন, ‘যৌথ আরব বাহিনী’ গঠনের প্রস্তাব:“এই জোটের উত্থানের আগেই মৃত্যু হবে” মন্তব্য
কাতারে জরুরি আরব–ইসলামিক সম্মেলন, ‘যৌথ আরব বাহিনী’ গঠনের প্রস্তাব:“এই জোটের উত্থানের আগেই মৃত্যু হবে” মন্তব্য

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার মাত্র এক সপ্তাহ পর কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনের জরুরি আরব–ইসলামিক সম্মেলন। ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই সম্মেলনে আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিরা গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

সম্মেলনের সবচেয়ে আলোচিত প্রস্তাব আসে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসির কাছ থেকে। তিনি ন্যাটোর আদলে ‘জয়েন্ট আরব ফোর্সেস’ বা যৌথ আরব বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রস্তাব অনুযায়ী, ন্যাটোর মতোই এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশ অপর সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা ও সহায়তায় এগিয়ে আসবে। প্রাথমিক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আরব বিশ্বের নিরাপত্তা রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই হবে এই বাহিনীর মূল দায়িত্ব। কায়রোতে সদর দপ্তর স্থাপন এবং বিমান, নৌ ও স্থলবাহিনীর সমন্বয়ে বাহিনী গঠনের প্রস্তাবও এসেছে।

এ নিয়ে বিশ্লেষকরা উদ্যোগটিকে ‘আরব ন্যাটো’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে এটি নতুন কোনো ধারণা নয়। ২০১৫ সালেও মিসর একই ধরনের যৌথ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, যদিও আরব লীগের কয়েকটি দেশের অনাগ্রহের কারণে উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হয়নি।

সম্মেলন শেষে গৃহীত যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের ওপর আইনি, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। গাজায় জরুরি ত্রাণ সরবরাহ, অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে জাতিসংঘ থেকে ইসরায়েলের সদস্যপদ স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়।

গালফ সিকিউরিটি কাউন্সিল (জিসিসি) পৃথক বিবৃতিতে কাতারে হামলার নিন্দা জানিয়ে উল্লেখ করে, “সহযোগী যেকোনো দেশে হামলা মানেই সবার ওপর হামলা।”

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি উদ্বোধনী ভাষণে অভিযোগ করেন, “ইসরায়েল গাজার যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক নজর সরিয়ে নিতে কাতারে হামলা চালিয়েছে।” তিনি বলেন, “জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে আলোচনায় থাকা হামাস নেতাদের হত্যার চেষ্টা কেন?”

মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি সতর্ক করে বলেন, “ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।”

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই সম্মেলন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইয়েমেনের রাজনীতিবিদ শেখ হুসেন হাজেব এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “এই জোটের উত্থানের আগেই মৃত্যু হবে।”

আশা ও সংশয়ের মাঝেই শেষ হলো দোহা সম্মেলন। এখন দেখার বিষয়, প্রস্তাবিত ‘যৌথ আরব বাহিনী’ আদৌ বাস্তব রূপ পায় কিনা, নাকি আগের মতোই কেবল নিন্দা জ্ঞাপনেই সীমিত থাকে।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *