ত্রিশালে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২৩ | আপডেট: ৭:২৬ অপরাহ্ণ,

এস.এম রুবেল আকন্দ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিক্ষোভ ও অবরোধ চলাকালে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল দেড়ঘন্টা বন্ধ থাকে। এতে চরম যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারিরা জানায়, ত্রিশাল উপজেলার বৈলরের মোড় থেকে ধানীখোলা ইউনিয়নের শেষ সিমান্ত পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর ধরে খানাখন্দকে ভরা। ভারি যানবাহন চলাচল করার কারণে ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের জন্য রাস্তাটি ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটি দিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সমস্যায় পড়তে হয়।

 

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মশিউর রহমান শাহানশাহ, ধানীখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, আওয়ামী লীগ নেতা আঃ মতিন,ব্যবসায়ী আলমগীর কবীর, বাদশা দেওয়ান, তানভীর আহমেদ প্রমুখ।

 

পরে ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিনের আশ্বসের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তোলে নেন। বিক্ষোভকারিরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন ।

 

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানাযায়,সড়কের সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৫ মাসের মধ্যে। কিন্তু প্রায় ৫৬ মাস পার হওয়ার পরও শেষ হয়নি ত্রিশাল উপজেলায় একটি সড়কের সংস্কারকাজ। কাজের ধীর গতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ত্রিশাল –ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ মেয়াদে কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল না দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বইলর থেকে ফুলবাড়িয়া সীমানা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ১৩ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। সে কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, বিল না পাওয়ার কারণে কাজে ধীর গতি হচ্ছে।

 

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়কের আশপাশে বসবাসরত মানুষসহ সড়ক ব্যবহারকারী সবাইকে। বইলর এলাকার বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, ‘আট থেকে ১০ গ্রামের মানুষ এই সড়ক হয়ে ময়মনসিংহ এবং ত্রিশাল বাজারে যায়। বইলর এলাকা মৎস্য চাষের জন্য বিখ্যাত। সড়ক বেহাল হওয়ায় এখানকার মাছ চাষিরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে মানুষ সড়কের জন্য অনেক কষ্ট করছেন। তবে যে মানের কাজ হচ্ছে, তাতে শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সড়ক আবারও ভেঙে যাবে। আমাদের ভোগান্তি আর শেষ হবে না।’

 

ভ্যানচালক তাজুল মিয়া বলেন, ‘রাস্তার খানাখন্দের কারণে মানুষ ভ্যানে উঠতে চায় না। একটু পরপর ভ্যান থেকে মানুষকে নামিয়ে আবার ওঠাতে হয়। আমরা ভ্যানওয়ালারা খুব কষ্টে রয়েছি। রাস্তার কাজ শুরু দেখে ভালো লেগেছিল। কিন্তু কাজ শুরুর চার বছরেও তেমন অগ্রগতি না হওয়া এবং কাজের মানে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছু না।’

 

মেসার্স ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সুনামের সহিত কাজ করি। কিন্তু এই কাজটিতে বিল না পাওয়ার কারণে আমাদের কাজের ধীর গতি শুরু হয়। এত টাকার কাজে দুটা বিল পেয়েছি আড়াই কোটি টাকার মতো হবে। পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের কাজ কোন মতে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করব।’

 

ত্রিশাল উপজেলা উপসহকারি প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে আমি রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। বাস্তবেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী। অফিস খোলা হলেই আমরা গর্তগুলো ভরাট করে দিবো, যাতে

গাড়িগুলো চলাচল করতে পারে। রাস্তার কাজ দ্রুত সংস্কার করা হবে।

 

ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, দ্রুত রাস্তা সংস্কারের আশ্বাসের দিলে আন্দোলনকারিরা মহাসড়কের অবরোধ তোলে নেন।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *