শংকু সমজদারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বৃদ্ধ মাতা দীপালি সমজদারের বাসায় ড. চিত্রলেখা
হীমেল কুমার মিত্রঃঃ
স্বাধীনতা সংগ্রামে কিশোর শংকু সমাজদার রংপুর অঞ্চলের প্রথম শহিদ।
একাত্তরের ৩ মার্চের সেই উত্তাল দিনের কথা বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু।
তার ভাষ্যমতে, ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর সারা দেশের মতো উদ্বেলিত হয়েছিল রংপুরের মানুষও।
ইয়াহিয়া খান একাত্তরের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করলেও ১ মার্চ অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল পূর্ব বাংলা।
সারা দেশের মতো রংপুরেও দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল বিদ্রোহের আগুন।
পূর্বনির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত হওয়ার প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু।
এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে হরতাল পালিত হয়।
পাকিস্তানি দখলদারদের শোষণ-শাসন এবং ষড়যন্ত্রের খপ্পর থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল রংপুরের মানুষ।
৩ মার্চ সকালে হরতালের সমর্থনে কাচারী বাজার এলাকা থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম গোলাপ, অলক সরকার, মুকুল মুস্তাফিজ, নূর উর রসুল চৌধুরী, হারেস উদ্দিন সরকার, ইলিয়াস আহমেদ, মুসলিম উদ্দিন (মুসলিম কমিশনার), আবুল মনসুর আহমেদসহ আরও অনেকের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়।
সেই মিছিলে বড় ভাইয়ের হাত ধরে যোগ দেন কৈলাশ রঞ্জন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শঙ্কু সমজদার।
মিছিলটি শহরের তেঁতুলতলা (বর্তমান শাপলা চত্বর) এলাকায় আসতেই কলেজ রোড থেকে কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি শহীদ মুখতার ইলাহি (কয়েক মাস পরে শহীদ হন), জায়েদুল আলম, জিয়াউল হক সেবুসহ অন্যদের নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে যোগ দেয় মূল মিছিলের সঙ্গে।
‘মিছিল এগিয়ে চলে স্টেশন অভিমুখে। মিছিলটি আলমনগর এলাকার অবাঙালি ব্যবসায়ী সরফরাজ খানের বাসার (ঘোড়াপীর মাজারের পাশে) সামনে যেতেই এক কিশোর ওই বাসার দেয়ালে একটি উর্দুতে লেখা সাইনবোর্ড দেখে তা নামিয়ে ফেলতে উদ্যত হয়। আর তখনই বাসার ভেতর থেকে মিছিলটি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।
সেখানে গুলিবিদ্ধ হয় কিশোর শংকু সমজদার।
সঙ্গে সঙ্গে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ কিশোরকে শংকুকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে মুসলিম উদ্দিন কমিশনার হাসপাতালের দিকে দৌড়ালেন।
কিন্তু পথেই কিশোর শংকু মারা যায়। হয়ে যায় ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামে রংপুর অঞ্চলের প্রথম শহীদ কিশোর শংকু সমজদার।
এদিকে কিশোর শংকু সমজদারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভের আগুনে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পুরো রংপুর। গুলিবিদ্ধ কিশোর শংকুর রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে জনতা উত্তেজিত হয়ে অবাঙালিদের দোকান ভাঙচুর ও দোকানের সামগ্রী রাস্তায় এনে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে।
যে বাড়ি থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল সেই বাড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা।কিন্তু ইপিআর বাহিনী এসে বাধা দেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনে রংপুরের প্রথম শহীদ কিশোর শংকু সমজদারের মায়ের ইচ্ছা পূরণে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উমর ফারুক গড়ে তুলেছেন শহীদ শংকু সমজদার বিদ্যানিকেতন।
শহীদ শংকু সমজদার একটি সাহসের নাম।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে এই নামটি জড়িয়ে আছে। রংপুরের মানুষের আবেগের সঙ্গে এই নামের সম্পর্ক।
আজ (০৩ মার্চ) শুক্রবার শহিদ শংকু সমজদারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বৃদ্ধ মাতা দীপালি সমজদারের বাসায় যান
জেলা প্রশাসক
ড. চিত্রলেখা নাজনীন।
এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেয়া হয় এবং তাঁর বীরত্বের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দগণ উপস্থিত ছিলেন।