১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ধস, আস্থার সংকটে দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: 11:16 am, September 15, 2025 | আপডেট: 11:16 am,

১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ধস, আস্থার সংকটে দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তা
১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ধস, আস্থার সংকটে দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তা

রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চিত ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) তীব্রভাবে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে এফডিআই এসেছে মাত্র এক লাখ ডলার—যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯৩ শতাংশ কম। একই সময়ে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রবণতাও বেড়েছে।

আস্থাহীনতার দীর্ঘ ছায়া

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগবান্ধব নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব না নিলে এ অবস্থা কাটবে না।”

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজও মনে করেন, বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির যোগ করেন, বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুত প্লট ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না পাওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্বপ্ন থমকে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি কমেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানিয়েছে, আপাতত সরকারি মাত্র পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “আগামী ১০ বছরে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলেই যথেষ্ট। এখনই শতাধিক অঞ্চল তৈরির প্রয়োজন নেই।”

অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, অধিকাংশ অঞ্চলে সড়ক, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎসহ মৌলিক সেবা নিশ্চিত হয়নি। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদাহরণ টেনে ড. মাহফুজ কবির বলেন, “বিনিয়োগকারীরা ইউটিলিটি সুবিধা না পেয়ে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন, অনেকে এখন বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন।”

ইপিজেডেও ধস

রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলেও (ইপিজেড) একই চিত্র। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রসেসিং জোন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২২ শতাংশ। যদিও রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ

সমাধান ও সুপারিশ

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগ বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জ্বালানি সরবরাহ, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো প্রয়োজন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়।

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সময় আস্থা ফেরাতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক নীতি প্রণয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *