১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী
খন্দকার ছদরুজ্জামান, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। সারা দেশের ন্যায় নড়াইলে লোহাগড়ায় গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। জাতির জনককে সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ৪৮ বছর।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এস এম আসিফুর রহমান (বাপ্পি), সহ-সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নড়াইল জেলা শাখা ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করে এই দিনটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নড়াইল জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী এস এম আসিফুর রহমান (বাপ্পি) এক শোক বার্তায় জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে রাজধানী ঢাকায় সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এদিন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলার রাখাল রাজা ও মহানায়ককে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল।
বাঙালির মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব, তার চেতনা অবিনশ্বর। মুজিব আদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস, জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবহমান থাকবে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, ডিজিটাল, মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন করেছে।প্রতিবছরের ন্যায় এই দিনের মতো আজও যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী পালনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন।
বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাড়িতে তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের,বঙ্গবন্ধুর ভাগনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়।বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রণেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ্রদৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণার বিষবাষ্প।
পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে।বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতা বিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা উদ্যোগ নেয়। শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর অনেক পরে খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদকে পরের বছর ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় বাকি খুনিদের সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাধীনতার স্থপতিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের পথও সুগম হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।