জমকালো আয়োজনে উদযাপিত হলো ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস

প্রকাশিত: ৯:২০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ | আপডেট: ৯:২০ পূর্বাহ্ণ,

মোঃ খাইরুজ্জামান সজিব সার্ব এডিটর 

জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে।

 

দিবসটি উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আজ বিকেলে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিএমপির সার্বিক কার্যক্রমের উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

 

প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আহ্বান করেছিলেন, বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হওয়ার জন্য। আজ পুলিশ সেই জায়গায় এসেছে। জনগণের আস্থার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গাটাতে পুলিশ এসেছে। পুলিশ আজ জনগণের বন্ধু।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ২০১৪-১৫ সালে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করার দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখেছেন। তখন কাজ করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেকটা আন্দোলনে ও সংকটে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা ও বীরত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই আজ বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জঙ্গি উত্থানের কারণে আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের অপচেষ্টা যখন হয়েছিলো তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ডিএমপিতে সিটিটিটিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সিটিটিসি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে জঙ্গি দমন করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতির পিতার চিন্তা চেতনাকে ধারণ করে ডিএমপি এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন পুলিশ শুধু আজ্ঞাবাহী পুলিশ হবে না, তারা জনগণের সেবক হয়ে জনগণের পাশে থাকবে। এ লক্ষ্যে ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের মুখচ্ছবি হয়ে, জনগণের সেবক হয়ে, জনগণের সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।তিনি আরো বলেন, মহনগরীতে অপরাধের ধরণ যেমন পাল্টাচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশ তার কার্যধারাও পাল্টাচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিনিয়ত সমাজের নানা চ্যালেঞ্জ ও সংকট মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে।ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আইজিপি বলেন, দেশমাতৃকার সেবা, জননিরাপত্তা প্রদান পুলিশের মূল দায়িত্ব। বাংলাদেশের রাজধানী ও সর্ববৃহৎ নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কথা বিবেচনা করে ‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ – মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ১৯৭৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা, মূল্যবোধ ও দৃঢ় মনোভাবের কারণে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাজধানী ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মাদক, জঙ্গিবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্মানিত নগরবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে সফল হয়েছে। নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কুইক রেসপন্স টিম গঠন করেছে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং-এর মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনসাধারণের সাথে সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।

আইজিপি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সম্মানিত নগরবাসীর প্রতি, যাদের দায়িত্ববোধ ও সর্বাত্মক সহযোগিতায় ডিএমপি এগিয়ে চলছে। শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগরবাসীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। তদুপরি নগরবাসীর মাঝে আইনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। নগরবাসীর কাছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আস্থা বৃদ্ধি করে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই হবে ডিএমপির মূল লক্ষ্য। আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ডিএমপি ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে স্মার্ট পুলিশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য হবে অগ্রসৈনিক। ডিএমপি তার পেশাধারিত্ব, দক্ষতা, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিরাপদ, টেকসই স্মার্ট ঢাকা নগরী গড়ে তুলবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে ডিএমপি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম গুলিতে শহীদ হওয়ার কারণে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার পুলিশ সদস্য ও ১২টি থানা নিয়ে ডিএমপি যাত্রা শুরু করে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মেগাসিটি বৈচিত্র‍্যময় মহানগরী ঢাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখা, অপরাধ দমন, জঙ্গি-সন্ত্রাস দমন ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিস্থিতি বজায় রাখতে বাংলাদেশ পুলিশের মুখচ্ছবি হিসেবে ‘টিম ডিএমপি’ কাজ করে যাচ্ছে।তিনি আরো বলেন, অতীতে যারা জঙ্গি নাশকতা সৃষ্টি করেছে, ডিএমপি কঠোর হস্তে তাদের দমন করেছে। বর্তমানে ডিএমপির সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি জঙ্গি ও নাশকতা চালালে ডিএমপি কঠোর হস্তে তাদেরকে দমন করবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমাণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি। আগামীতে :স্মার্ট ডিএমপি’ গঠনে আমরা বদ্ধপরিকর।পরবর্তীতে, প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে প্রকাশিত বিশেষ ম্যাগাজিন ‘আস্থা’র মোড়ক উন্মোচন করেন। এরপর তিনি কেক কেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সচিববৃন্দ, বিচার বিভাগের বিচারকবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ, সুশীল সমাজের সম্মানিত প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, সাবেক আইজিপিবৃন্দ ও কমিশনারবৃন্দ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, পুনাক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিগণ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ, নাটক, চলচ্চিত্রসহ বিনোদন জগতের শিল্পীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নেতৃবৃন্দ, ৭১’ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জীবিত পুলিশ সদস্য ও আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া আজ সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এ অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা অভিনেতা, অভিনেত্রী, সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা এবং বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *