তিস্তা নদী মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন
হীমেল কুমার মিত্র
স্টাফ রিপোর্টার ঃ ঃ
তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তিস্তা চুক্তি সই, রংপুর বিভাগের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সর্বজনের সংহতি সভা ও মাননবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (১১ মার্চ) শনিবার দুপুরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে সভা কক্ষে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সর্বজনের সংহতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব মোঃ মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বজনের সংহতি সভা অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, রংপুর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সারোয়ার্দী বাপ্পী।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, অধ্যাপক মোজাহার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু, কমিউনিস্ট পার্টির শাহাদৎ হোসেন, বাসদের আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল জলিল শেখ, মাহামুদুল আলম ও রফিকুল ইসলামসহ রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৬ দফা দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করে আসছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। আন্দোলনের একটি পর্যায়ে সরকার দাবি বাস্তবায়নের কথা বললেও তার বাস্তবায়ন থমকে গেছে। উল্টো বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি প্রতিবেশি পশ্চিমবঙ্গ সরকার উজানে তিস্তার পাশে আরো দুটি খাল কেটে তিস্তার অবশিষ্ট পানি একতরফা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। তিস্তা নদী সমস্যা দিনদিন প্রকট হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশর প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্ত আছে, তিস্তা নদী ও পানি বিষয়ক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। পানি বন্টনের সিদ্ধান্ত নেবেন দু’’দেশের প্রধানমন্ত্রী। দু’’দেশের প্রধানমন্ত্রী ২০১১সালে এই লক্ষ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেন। তিস্তা চুক্তি সই এবং অববাহিকা ভিত্তিক যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকার পরেও শক্তিশালী প্রতিবেশি কোন কিছু মানছে না। ২০১১ তিস্তা চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত হলেও মমতার আপত্তির মুখে কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি সই থেকে পিছু হটে। ২০১৪ সালের আগে শুষ্ক মৌসুমে অল্প কিছু পানি হলেও আমরা পেতাম। ২০১৪ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার খরাকালে উজানে তিস্তার পানি পুরোটাই প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সমাধানের আশ্বাস দিলেও তা আটকে গেছে। এরই মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার উজানে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে তিস্তা নদীর পাশে আরো দু’টি খাল খননের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এটি বাস্তবায়ীত হলে বাংলাদেশ অংশের তিস্তায় বর্ষাকালের তিনমাস ছাড়া নয় মাসই পানি থাকবে না। সম্পূরক সেচের জন্য আমাদের তিস্তা সেচ প্রকল্প পানি সংকটে অকার্যকর হবে। মহানন্দা পর্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়বে। খাল দিয়ে ভারত জলঢাকা নদীর পানি সরিয়ে নিলে কুড়িগ্রামের ধরলা নদীটিও মরে যাবে। মরে যাবে তিস্তার শাথা-উপনদী।
বক্তারা আরো বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা তিস্তার দুঃখ লাঘবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এ তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে দেশবাসীকেজানিয়েছিলেন।
চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরু করার আশাবাদের খবরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তিস্তা মহাপরিকল্পনা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আটকে আছে। ভূ-রাজনীতির টানাপোড়নে এই মহাপরিকল্পনার অর্থায়নের বিষয়ে অন্য দেশ থেকে অর্থ গ্রহণে যদি প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। এবং এই লক্ষ্যে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠনেরও প্রস্তাব জানানো হয়।
সর্বজনের সংহতি সভা শেষে রংপুর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। এ সময় আগামী মে মাসের দিকে জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানানো হয়।
বক্তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তা নদীর পাশে আরো দুটি খাল খননের পরিকল্পনা নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা অবিলম্বে খাল দুটি খনন পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানান।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজনৈতিক সিন্ধাস্তহীনতার কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। ভারত নতুন দুটি খাল নতুন করে খনন করলে উত্তরাঞ্চল মরভূমিতে পরিনত হবে। তারা পদ্মাসেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন,জলাধার নির্মাণ ও তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানান।