মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের চিরচেনা যানযটের চিত্র এখন উধাও; ট্রাফিক বিভাগের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
জহিরুল ইসলাম রাজু:::
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্টারসেকশন। আসাদগেট, ধানমন্ডি এবং বসিলাকে সংযোগকারী এই রাস্তার আশেপাশেই রয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সমস্যার আধিক্যের ফলে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে হাজারো মানুষের, নষ্ট হয়েছে হাজারো কর্মঘন্টা।
সম্প্রতি, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক এই দুর্ভোগ লাঘবে নুতন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশের নুতন পরিকল্পনায় কমে এসেছে আগের সেই চিরচেনা যানজট। প্রতিবেদককে মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডে বসবাসকারী ব্যবসায়ী কাজী আমানুল্লাহ জানান “আমার স্ত্রী একজন শিক্ষিকা, আমি তাকে প্রতিদিন স্কুলে নামিয়ে দিতে যাই। দীর্ঘ ২২ বছর এই এলাকায় বসবাস করছি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার এমন সুন্দর দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।” একদিকে অফিসগামী মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে, ঠিক তেমনি উপকৃত হচ্ছে মোহাম্মদপুরে অবস্থিত অসংখ্য স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুরবাসী মোস্তফা কামাল আরিফ জানান, “আমার ছেলে মাহাদী মোস্তফা সেন্টজোসেফ স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। প্রতিদিন যাওয়া-আসার সময় চরম একটা হ্যাজার্ড অবস্থা আমাদেরকে এখানে পোহাতে হতো। আমার ছেলের ক্লাসে এটেন্ড করাতে হলে আমার বাসা থেকে মিনিমাম এক ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হওয়া লাগতো, সেখানে আমার এখন লাগছে ১৫ থেকে ২০ মিনিট।”
অনুসন্ধানকালে জানা যায় যে, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের এই পদক্ষেপ অনেকদিনের, বিভিন্ন পরিকল্পনার ট্রায়ালের মাধ্যম তাঁরা আজকের এই অবস্থায় পৌঁছাতে পেরেছে। বিস্তারিত অনুসন্ধানকালে জানা যায়, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের গৃহীত এই পরিকল্পনায় রয়েছে একাধিক পদক্ষেপ, যেমন-
১) মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সকল গণপরিবহনের অস্থায়ী পার্কিং অপসারণ।
২) বসিলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ননস্টপ সার্ভিস চালু করা
৩) বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা চার রাস্তার মোড় পর্যন্ত সকল অবৈধ হকার উচ্ছেদ করে শতভাগ রাস্তা যানবাহন চলাচল উপযোগী করা।
৪) বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক বিআরটিসি’র বাস ডিপো থাকায় বিআরটিসি’র বাস দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করার সুযোগ না দেওয়া এবং এ সংক্রান্তে কর্তৃপক্ষের সাথে যথাযথ সমন্বয় করা।
৫) মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক নতুন সার্কুলেশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।
এমনকি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নতির স্বার্থে বাসস্ট্যান্ডর অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি অপসারণ করে রাস্তা ও ইন্টারসেকশন প্রশস্ত করার উদ্দেশ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ট্রাফিক-মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল জানান, “আজকের এই অবস্থা শুধু একদিনের ফসল নয়, ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোস্তাক আহমেদ মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করছি। ক্রমাগত প্রচেষ্টা এবং নিরলসভাবে লেগে থাকায় নতুন ট্রাফিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলো, যার সুফল এখন নগরবাসী পাচ্ছে।”
ট্রাফিক পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রাণপ্রিয় ঢাকা শহর আরও বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে, কমে আসবে চিরচেনা যানজট এমনটাই প্রত্যাশা সবার।