চাকরিচ্যুত মাদরাসা শিক্ষক দলবল নিয়ে এসে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উপর হামলা
গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টায় হাতিরঝিলে অবস্থিত নয়াটোলা এ ইউ এন কামিল মাদ্রাসায় প্রতারণার দায়ে চাকরিচ্যুত মাদরাসা শিক্ষক মুনির আহমেদ খান সরকারি কোন নির্দেশনা না নিয়ে জোরপূর্বক পুনঃনিয়োগের জন্য অধ্যক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন। পুনঃনিয়োগ বিবেচনা উপলক্ষে অত্র প্রতিষ্ঠানে এলে তার মতাদর্শী কিছু বহিরাগত শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করতে একত্রিত হন। এমন সময় এলাকাবাসী, ছাত্র অভিভাবক ও মাদরাসা গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে ঐ শিক্ষকের কাছে বৈধ কাগজ দেখতে চাইলে শিক্ষকের সাথে সেখানে উপস্থিত তার মতাদর্শী সন্ত্রাসীরা মাদরাসার সাধারণ শিক্ষার্থী, উপস্থিত অভিভাবক ও মাদরাসা গভর্নিং বডির সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। জানা যায় হামলাকারীরা তার মতাদর্শী চিহ্নিত সন্ত্রাসী মো. ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে মাহমুদুল ইসলাম তামিম, আশরাফুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, সাদিক মাহমুদ, নবীর হোসেন ও আমিরুল ইসলাম প্রমুখ হামলা পরিচালনা করে। এই হামলায় আহত হয় সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্র অভিভাবকসহ অন্তত ১১ জন।
অভিযুক্ত চাকরিচ্যুত মাদরাসা শিক্ষক মুনির আহমদ খান সম্পর্কে অত্র মাদরাসার অধ্যক্ষ জনাব রেজাউল হকের নিকট ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি জানান- ২৩/১০/১৯৯৭ ইং সালে মাও : মুনির আহমদ খানকে নয়াটোলা এ ইউ এন মডেল কামিল মাদরাসায় নিয়োগপত্র প্রদান করা হলে তিনি ০৬/১১/১৯৯৭ ইং সালে তিনি অত্র মাদরাসায় যোগদান করেন এবং এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেন। তার নিয়োগপত্রে সরকারী বেতন ৩,৮১৫/- (১০ম গ্রেড) টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার নির্ধারিত বেতন স্কেল থেকে কয়েক ধাপ ডিঙ্গিয়ে ৭,২০০/- (৬ষ্ঠ গ্রেড) টাকা স্কেলে বেতন উত্তোলন করার ব্যবস্থা করেন।
নির্ধারিত বেতনের চেয়ে অতিরিক্ত সরকারী অর্থ বেতন হিসেবে উত্তোলনের বিষয়ে গভর্ণিং বডি তার কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায় এবং কারণদর্শাতে বলে। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এবং তিনি উত্তোলিত অতিরিক্ত সরকারী অর্থ সরকারী কোষাগারে জমাও দেননি। ফলতঃ পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা অীধদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে মাওঃ মুনির আহমদ খানের প্রতারণার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার এমপিও বাতিল করার নির্দেশনা প্রদান করে।
নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয় যে, তার নিয়োগ বিধিসম্মতভাবে হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি কিছু জাল কাগজপত্রও ব্যবহার করেছেন, তাই তিনি সরকারী টাকা প্রাপ্য নন। তাই তার সমুদয় টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয় । তৎপ্রেক্ষিতে ১২/১১/২০১৩ তারিখে মাউশি এমপিও শীট থেকে তার নাম কর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপূর্বে ০৩/০৭/২০১১ তারিখে গর্ভর্ণিং বডির সভাপতি তাকে অবৈধভাবে উত্তোলিত সরকারী টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তিনি তা সরকারী কোষাগারে জমা দেননি। ফলতঃ ২১/০৬/২০১১ তারিখের মাউশির নির্দেশনা এবং ১৭/০৪/২০১১ তারিখের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে তাকে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এর প্রায় দীর্ঘ সাতবছর পর ১৫/০৪/২০১৮ তারিখ তিনি অসদোপায় অবলম্বন করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে এলে মাননীয় আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে গভর্নিং বডি তাকে মাদরাসায় পূণঃনিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার পূর্ব প্রতারণার বিষয়ে অবহিত থাকায় তদন্ত করিয়ে আইন বিভাগের মতামত গ্রহণ করেন এবং এমপিও শীটে তার নাম পূণঃসংযোজন করা যাবে না মর্মে মতামত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে।
ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ মাস ক্লাস করানোর পর ০১/১১/২০১৮ তারিখ থেকে মাওঃ মুনির আহমদ খান মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন। যার প্রেক্ষিতে ০১/১২/২০১৮ তারিখে ১ম শোকজ, ১৫/১২/২০১৮ তারিখে দ্বিতীয় শোকজ করা হয়। পরপর দুটি শোকজ করার পরও কোনো জবাব না পাওয়ায় ০৫/০১/২০১৯ তারিখে গভর্নিং বডির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তৃতীয় শোকজ করা হয়। বিধি মোতাবেক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ২৫/০৪/২০১৯ তারিখে তদন্ত কমিটির সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাকে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির সামনে তিনি উপস্থিত হননি। অতঃপর ২৫/০৫/২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত গভর্নিং বডির সভায় তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয় এবং ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। ০৬/১১/২০১৯ তারিখে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় স্মারক নম্বর : ইআবি/প্রশ/কা.গ.র/৩১২১/২০১৩/১০০৯৮ মারফত চূড়ান্ত বরখাস্তের পূর্বানোমোদন করা হয়।
প্রতারণার দায়ে চাকরিচ্যুত মাদরাসা শিক্ষক মুনির আহমেদ খান চিহ্নিত সন্ত্রাসীবাহিনী এনে যেভাবে মাদরাসার সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্র অভিভাবকদের উপর হামলা করে রক্তাক্ত করেছে তা দুঃখজনক। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অবিলম্বে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।