সংস্কারের মাধ্যমে আসা সরকারের মেয়াদ হবে অনধিক ৪ বছর- প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস
ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। বলা হয়, প্রাথমিকভাবে স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন আপনি। কিন্তু এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে বলে আলোচনা আছে। আসলে বাস্তবতা কি? জবাবে ড. ইউনূস বলেন- না। কেউ কেউ বলছেন স্বল্প সময়ের (সরকার এটা)। কখনোই এটাকে স্বল্পমেয়াদি হিসেবে কল্পনা করা হয়নি। পুরো সরকারের প্রধান আকর্ষণ ছিল সংস্কার। কারণ ছাত্রদের নেতৃত্বে পুরো আন্দোলনই হলো একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করা। তাদের কাছে নতুন শব্দ ছিল নতুন বাংলাদেশ। শুধু একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়েই একটি নতুন বাংলাদেশ আসবে না। একটি নির্বাচন করা পুরনো রাজনীতি এবং তারই কিছু ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি। এসব বিষয় থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই। পুরো দেশের মানুষ এটাই চায়। পুরনোর চেয়ে কিছু আলাদা, কিছু নতুন জিনিস। সুতরাং এর অর্থ অনেক কিছু। এর অর্থ হলো আইন ব্যবস্থার সংস্কার। কারণ, বিচার বিভাগকে (বিগত) সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। পুরো দুর্নীতিপরায়ণ করা হয়েছে এবং আরও অনেক কিছু। পুরো পুলিশ ব্যবস্থা সহ অনেক কিছুকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। সর্বোপরি সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন। সংবিধানের একেবারে মৌলিক আইনগুলোর সংস্কার প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হলো কীভাবে আপনি সংবিধানকে নতুন করে সাজাবেন? এ জন্য আমরা নতুন করে ডিজাইন করেছি, নিয়োগ দিয়েছি, কমিশন করেছি। এর মধ্যে আছে প্রাতিষ্ঠানিক কমিশন, আইন সংস্কার কমিশন, সবকিছু। আছে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন। এ জন্য সময় লাগছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে তারা রিপোর্ট জমা দেবেন। ওইসব রিপোর্ট জমা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। হ্যাঁ, এটাই পুরো ধারণা। আমি আগেই বলেছি সমান্তরালে দু’টি বিষয় চলছে। এক. নির্বাচনের প্রস্তুতি। দুই. সব রকম সংস্কারের প্রস্তুতি। ব্যাস। এখন বিষয়টি জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে যে কোন পথে যাবে। আমি বলবো মনে রাখবেন, নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করেছে ট্রেন। শিগগিরই নির্বাচনের কাছে চলে যাবে। এই ট্রেন ছুটছে। সুতরাং এক পর্যায়ে একটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবে তা। আমরা দেশের জনগণের কাছে জানতে চাইবো আপনারা কি এই সিস্টেমে চলতে পছন্দ করেন? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নির্বাচন চায় জনগণ। এ জন্য আপনাকে কিছু করতে হবে। বিষয়টি নির্ভর করছে আপনার ওপর। আমাদের ওপর নয়। এটা তাদের বিষয়। সবসময় আমরা বলে আসছি আপনাদের সঙ্গে আমরা পরামর্শ করছি। কোনো কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছি না আমরা। যদি আপনারা বলেন- সামনে এগিয়ে যান, নির্বাচন দিন, সংস্কারের কথা ভুলে যান, তাহলে আমরা নির্বাচন করবো। যদি আপনারা বলেন- না। তাহলে ‘না’। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অন্য কোনো সরকার এটা করতে পারবে না। পুরো ইতিহাসে এই সরকারটি সৌভাগ্যবান যে, আপনি সব কাজ করতে পারবেন। যদি রাজনৈতিক দলগুলো এর সঙ্গে একমত থাকেন, তাহলে তা করা যাবে। আমরা সংস্কার করে নির্বাচন দেবো। প্রশ্নকর্তা জানতে চান- তাহলে সঠিক সময় কখন হবে, সে সম্পর্কে আপনার মনে কি অনুমিত কোনো ধারণা আছে? অথবা অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে প্রস্তুতি নিতে সুনির্দিষ্টভাবে কতো সময় লাগবে। জবাবে ড. ইউনূস বলেন- না। আমার কোনো ধারণা নেই। আমি তো মনে করি সবারই অন্তর্বর্তী সরকার আছে। আমরা স্থায়ী সরকার নই। উদাহরণ হিসেবে মনে করুন, আমাদের এখানে নিয়মিত সরকারের মেয়াদ হয় ৫ বছর। এটাই বিষয়। কিন্তু নতুন সংবিধানে সম্ভবত এর মেয়াদ করা হচ্ছে ৪ বছর। কারণ, জনগণ দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হতে চায়। এ জন্য এর মেয়াদ ৪ বছরের নিচে থাকা উচিত। এটা নিশ্চিত। এর চেয়ে কমও হতে পারে। তবে বিষয়টি হলো জনগণের, তারা কি চায়। রাজনৈতিক দলগুলো কি চায়। যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে এসব বিষয় ভুলে যান, নির্বাচন দিন। এসব আমাদেরকে করতে দিন। তাহলে আমরা তাই করবো। আপনার সামনে একটি সুযোগ এসেছে। তা নেননি। এ পর্যায়ে প্রশ্নকর্তা জানতে চান- ফলে ৪ বছরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে পারতেন আপনি, যেটা মোটামুটি নির্বাচনী টার্মের মতোই, তাই নয় কি? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি সেটা বলিনি। আমি বলিনি যে, ৪ বছরের জন্য আমি থাকবো। আমি বলেছি- এটাই যে কারও (সরকার) জন্য সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে। ঠিক আছে। আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব কাজ শেষ করা। এ পর্যায়ে প্রশ্নকর্তা তার কাছে জানতে চান- আপনি কি নির্বাচন করবেন? সরাসরি এ প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন- না। আমি কোনো রাজনীতিক নই। আমার ভূমিকা, যেটা এখন চালিয়ে যাচ্ছি, তা-ই উপভোগ করছি। আমার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এসব বিষয়কে পরিবর্তন করার চেষ্টাও করছি না।