কক্সবাজারের উখিয়ায় লাইসেন্স বিহীন করাতকল বসিয়ে অবাধে চেরাই করা হচ্ছে বনের গাছ

প্রকাশিত: 7:00 pm, February 4, 2025 | আপডেট: 7:00 pm,

কক্সবাজারের উখিয়ায় লাইসেন্স বিহীন করাতকল বসিয়ে অবাধে চেরাই করা হচ্ছে বনের গাছ

নুরুল বশর, উখিয়া কক্সবাজার ::-

কক্সবাজারের উখিয়ায় লাইসেন্স বিহীন করাতকল বসিয়ে অবাধে চেরাই করা হচ্ছে বনের গাছ। এতে পাহাড়ের সবুজ বাগান ও সামাজিক বনায়ন গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন আইন অমান্য করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষেই অবাধে গড়ে উঠেছে এসব করাতকল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বনজ, ফলজসহ নানা প্রজাতির গাছ এবং বন্য প্রাণী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না হলে পরিবেশের বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত এদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা৷ অন্যথায় উপজেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০টি অবৈধ করাতকল বসিয়ে অবাধে বনের গাছ ধ্বংস করা হচ্ছে। যার মধ্যে রাজাপালং ৬টি, রত্নাপালং ৭টি, হলদিয়াপালং ৭টি, জালিয়াপালং ৭টি ও পালংখালী ৮টি করাত রয়েছে। এসব অবৈধ করাতকলে দিনরাত চিরাই করা হচ্ছে বনের কাঠ। এসব দেখেও দেখছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া জামতলি, দৌছড়ি, ফলিয়াপাড়া, দরগাহ বিল, রূপপতি, সোনাইছড়ি, হলদিয়া পালং, গোয়ালিয়া পালং, পাগলিরবিল, টিএনটি, পালংখালী বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে, তেলখোলা, থাইংখালী বাজারসহ অনেক বনাঞ্চলের বন উজাড় করা হয়েছে৷ বিশেষ করে জামতলি এলাকায় রাত হলে অনেক বছর পুরোনো মাদ্রার ট্রি গর্জন গাছ কেটে নিয়ে যায় একটি সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ‘মাসোহারা’ দিয়ে এসব করাতকল পরিচালনা করা হচ্ছে। না হয় প্রশাসন ও বনবিভাগের নাকের ডগায় কীভাবে এসব অবৈধ করাতকল বা (স’মিল) চলছে প্রশ্ন। এসব করাতকল বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।

করাতকল বিধিমালা-২০১২ তে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না কোথাও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, রাজাপালং ফাজিল মাদ্রাসা, রাজাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজাপালং বালিকা দাখিল মাদ্রাসা৷ এই ৩টি প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে ২টি অবৈধ করাতকল বসিয়ে অবাধে বনের গাছ কাটছে৷ এই সব করাতকলের শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নুর হোসেন জানান, পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও রত্নাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝামাঝি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ করাতকল বসিয়ে দিনরাত বনের গাছ কেটে চেরাই করা হচ্ছে৷ এই করাতকলটি কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না৷ করাতকলের শব্দে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই এই অবৈধ করাতকল সরানো না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবো৷

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান জানান, অবৈধভাবে যে-সব করাতকল পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বনের পাশে সেসব করাতকল বা স’মিল বসিয়ে বনের গাছ উজাড় করা হচ্ছে সে সব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ না করার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই এসব বন্ধ করা জরুরি।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময় উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে ২টি করাতকল উচ্ছেদ করেছে। বন বিভাগের অভিযান চলমান রয়েছে৷

উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসনিম তাসিন বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে করাতকল, বালি উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন, ডাম্পার জব্দ করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চলমান অভিযানে করাতকল গুলো উচ্ছেদ করা হবে।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *