চাকরি হারানো দুই সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য চাকরি ফেরত পাওয়ার আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে

প্রকাশিত: 4:24 pm, December 2, 2024 | আপডেট: 4:24 pm,

চাকরি হারানো দুই সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য চাকরি ফেরত পাওয়ার আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে

মোঃ মুসফিকুর রহমানঃ

চাকরি ফিরে পাচ্ছেন না এ কথা শুনেই হার্ট এটাকে প্রাণ হারিয়েছেন চাকুরীচ্যুত পুলিশ সদস্য এএসআই মিজান। এছাড়াও কেহ মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন, জীবিকার সন্ধানে কেউ অটো রিক্সা চালাচ্ছেন, কেও আবার ফেরী করে পানি বিক্রি করেন, কেউ কেউ প্যাডেল চালিত রিকশা চালান। এরকম অগণিত পুলিশ সদস্যের বাড়িতে চলছে মানবেতর জীবনযাপন।

বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার হয়ে স্বৈরাচারীর দোসর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর, হাবিব বিপ্লব কুমার দের রোশানলে পড়ে দুই সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিচ্যুত হতে হয়। এসব ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যরা ছাত্র জনতার ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান। তাদের দাবিতে সাড়া দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন তৎকালীন পুলিশের আইজিপি বরাবর এসব চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদেরকে যথাযথ নিয়মে আবেদন করা নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক দুই সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য আবেদন করার পরেও প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিষয় এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি।

চাকুরী ফিরে পাওয়ার আশায় আশায় প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার মাঝেই দুশ্চিন্তায় চট্টগ্রামে সিএনজি চালানোর সময় স্ট্রোক করে মারা যান এএসআই মিজান। চট্টগ্রাম থেকে তার লাশ গ্রামের বাড়ি শেরপুরে নেওয়ার মতো টাকাও ছিল না পরিবারের লোকজনের হাতে। পরে চাকরিচ্যুত অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের তোলা চাঁদার টাকায় তার লাশ গ্রামে নিয়ে দাফন করা হয়। চাকরিচ্যুত কনস্টেবল তরিকুল ইসলাম মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারেন না।

ঢাকা জেলার সাভার থানায় কর্মরত ছিলেন এসআই আমিনুল ইসলাম, তিনি জানান, স্টোকজনিত কারণে আমার বাম সাইড প্যারালাইজড হয়ে যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম চিকিৎসার খরচ বহন না করতে পেরে বর্তমানে বাসায় আছি। কনস্টেবল রাশিদুল ইসলাম একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল ডিএমপিতে। চাকরি হারিয়ে বর্তমানে রিকশা চালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী এসব পুলিশ সদস্যরা বলেন, পুলিশের চাকরিটা এমনই একটা চাকুরী যে কেউ যদি চাকরিচ্যুত হন তাহলে তার পারিবারিক সামাজিক অবস্থান এতটাই নিচু হয়ে যায় যে অন্য কোন চাকরি তার কপালে জোটে না।

চাকরি হারানো দুই সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য বছরের পর বছর চাকরি ফেরত পাওয়ার আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে মামলা চালাতে চালাতে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ এসব ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুতির অবৈধ আদেশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে সসম্মানে চাকরিতে পুনর্বহালের রায় ও আদেশ পাওয়ার পরেও তাদেরকে পুনরায় কর্মস্থলে যোগদান করার সুযোগ দেয়নি স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের তল্পিবাহক বেনজির হারুন হাবিবের মত স্বেচ্ছাচারী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ। বিভিন্ন অজুহাতে তাদেরকে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখে ডিপার্টমেন্টের বাইরে রাখা হয়েছে যা অত্যন্ত অমানবিক।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *