তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২১টি প্রকল্পে হরিলুটের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি


নিউজ ডেস্কঃ
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে প্রকল্পের নামে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কী পরিমাণ অর্থ লোপাট ও দুর্নীতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে অন্তবর্তী সরকার। তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকল্পগুলোতে অপচয়, অসঙ্গতি, দুর্বলতা, আর্থিক ক্ষতি, অসম চুক্তি, জনবল নিয়োগে ত্রুটিসহ নানা অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের চলমান ২১টি প্রকল্পে হরিলুটের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের মধ্যে যেটা আছে সেটা হলো অপ্রয়োজনীয় অঙ্গসংযোজন। যেটা আমরা এখন বাদ দেয় তাহলে ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার কাজ কমানো সম্ভব হবে। এর বেশিরভাগ ছিল রাজনৈতিক প্রভাবিত।
প্রকল্পগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু অঙ্গ ও কার্যক্রম প্রকল্পের উদ্দশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন ও অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করায় জমি কেনা বাবদ অর্থের অপচয়, অধিক ভূমি উন্নয়ন ব্যয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রশস্ত, অতিরিক্ত উচ্চ ও অতিরিক্ত অবকাঠামো যেমন আইটি ট্রেনিং সেন্টারে গুদাম নির্মাণ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের অপচয় করা হয়েছে। বিসিসি, অধিদপ্তর ও হাইটেক পার্কের কর্ম বিভাজন ছিল না এবং সকলে একই প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সকল অধিদপ্তর ও সংস্থা হতে একই প্রকার কাজ যথা ট্রেনিং সেন্টার, ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ যে সকল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করেছে হয়েছে তা পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষক ও সহায়ক জনবলের প্রস্তাব রাখা হয়নি। ফলে এসকল ট্রেনিং সেন্টার পরিচালনার সুনিদিষ্ট রুপরেখা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেএে তিনটি ফেজ এ ৪৭টি ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের কার্যক্রম একসঙ্গে না নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরনের সেন্টার নির্মাণ করে তার সাফল্য পাওয়া গেলে একইরকম প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্থানে সম্প্রসারিত করা ঠিক হতো। একইভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও অনুদান প্রদানের ক্ষেএে সুবিধাভোগী নির্বাচন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করা হয়নি। তাই এসকল অপ্রয়োজনীয় অংশ প্রকল্প হতে বাদ দিলে সরকারের ৬ হাজার ৯৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
যেসব প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন এর দক্ষতা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প, দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইনে (১ম সংশোধিত), এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম, আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি) (১ম সংশোধিত প্রকল্প, আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি) প্রকল্প, হাই টেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন প্রকল্প (১২টি জেলায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি, শিবচর মাদারীপুরে প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, এস্টাবলিস্টমেন্ট অব বাংলাদেশ-ভারত সার্ভিস অ্যান্ড অ্যামপ্লয়মেন্ট ট্রেইনিং প্রকল্প, ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ (ইডিজিই) প্রকল্প, টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত এলাকাসমূহে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপন (কানেক্টেড বাংলাদেশ) প্রকল্প, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, বিজিডি-ই-গভ সার্ট এর সক্ষমতা বৃদ্ধি (১ম সংশোধিত প্রকল্প), সরকারের ভিডিও কনফারেন্সিং প্লাটফর্ম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ডিজিটাল সিলেট সিটি, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প (২য় পর্যায়) ও হার পাওয়ার প্রকল্প প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত)।