প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম ও উপজেলা পরিচালন পদ্ধতির উন্নয়নে কাজ করছে ইউজিডিপি প্রকল্প


মোঃ রাসেল কবিরঃ
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধিনে বাস্তবায়নাধীন উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পটি সারা দেশের প্রায় ৪৭৯ টি উপজেলায় (ইউজিডিপি) প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি, পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানি সরবরাহের বিভিন্ন উপকরন প্রদানের মাধ্যমে ব্যপক কাজ করে যাচ্ছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋন সহায়তায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই প্রকল্প স্থানীয় পর্যায়ে বিবিধ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের পরিচালন পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। প্রকল্পের দ্বারা নিয়োজিত ইউজিএফ-গণ উপজেলা পরিষদের সুশাসন নিশ্চিত করণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেছেন। প্রকল্পের উদ্যোগের কারণে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা, ১৭ টি কমিটির সভা, উপজেলা পরিষদের বাজেট, বার্ষিক আয় ব্যয় প্রতিবেদন, বার্ষিক/পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ইত্যাদি উপজেলা পরিষদের ওয়েব-পোর্টালে দৃশ্যমান হয়েছে যার ফলে উপজেলা পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানি সরবরাহ ও গ্রামীন জনপথকে অগ্রাধীকার দিয়ে উপজেলা উন্নয়নের সহযোগীতা করতে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন (ইউজিডিপি) নামে এ প্রকল্পটি। দেশের প্রান্তিক শ্রেনী পেশার জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর কর্মমূখী ও স্বাস্থ্যমূখী প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন বাজার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সোলার লাইটের আলোর মাধ্যমে গ্রামীন মানুষের জীবনযাত্রারমান উন্নয়নে সারা দেশে ব্যপক কাজ করে যাচ্ছে এ প্রকল্প।
স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় প্রকল্পের উল্ল্যেখযোগ্য কয়েকটি কাজ হলো নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ক্লিনিকের পরিধি বৃদ্ধি করে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি গ্রামীণ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূদের স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ইউজিডিপি প্রকল্পের অর্থায়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নরমাল ডেলিভারি কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৫৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিধি বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। জরুরী রুগীদের দ্রুত সদর হাসপালে বা ঢাকায় নিতে স্থানীয়দের চাহিদা মোতাবেক ৭১ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য নতুন অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে ৪৩ টি উপজেলায় ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন দেয়া হয়েছে, যা স্থানীয়দের স্বাস্থ্যসেবা পেতে ও এক্স-রে করাতে অধিক অর্থ ব্যয় রোধে সহায়তা করবে। দেশের অনেক উপজেলারমত পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও প্যাথলজি ল্যাবে আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে, সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে- হেমাটোলজি এনালাইজার, বায়োকেমিস্ট এনালাইজার, ইলেক্ট্রোলাইট এনালাইজার, ইউরিন এনালাইজার, হরমন এনালাইজার ও জেনারেটর। এতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষেরা কম খরচে স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়নে তৃণমূল পর্যায়ে ইউজিডিপি প্রকল্প ব্যপক সারা ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের সময় বসার জন্য ২ লাখ ৬ হাজার ৩২০ জোড়া বেঞ্চ এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় স্কুলে ৩১ টি সিলিং ফ্যান বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কর্মসূচিতে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয় ও তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যুগোপযোগী ভাবে গড়ে তোলার লক্ষে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কম্পিউটার, টেবিল ও চেয়ার দিয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ২৪৪ টি বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য হাইজিন কর্ণার ও চেঞ্জ রুম এবং ৯৮৩ টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার দেবীরচর দুমকী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নির্মিত ওয়াশ ব্লক, মুরাদিয়া ইউনিয়নের মাইনুল ইসলামের পুষ্টি বাগান ও ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন খামার, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মান, সৌর বিদ্যুৎ এর লাইট স্থাপন, আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়ায় জনসাধারনের গোসলের জন্য ঘাটলা নির্মান করা হয়েছে। সৌর বিদ্যুতের আলোয় গ্রামীন হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট আলোকিত করতে ১৭ হাজার ৬৪৫ টি ল্যাম্প পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের কাপ্তাই উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে মোট ১ শত ১১ টি সোলার লাইট বিভিন্ন অন্ধকারচ্ছন্ন রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্ট স্থাপন করা হয়। ফলে সন্ধ্যার পর সোলার বাতির আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার মোড়, ছোট-বড় বাজার গুলোতে সৌর বিদ্যুতের লাইটের আলোতে গ্রামীণ জনপদে এসেছে নিরাপত্তা। ইউজিডিপি’র আওতায় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আদমপুর বাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ফিস শেড ও বাজারের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ড্রেন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এই রকম ৬৯ টি বাজারে স্থানীয়দের চাহিদা মোতাবেক শেড নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
সুপেয় পানির চাহিদা পুরনে ইউজিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৯৭ টি স্থানে পাওয়ার টিলার সরবরাহ করা হয়েছে।উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তার সামগ্রিক ক্রয় প্রক্রিয়া উপজেলা পর্যায়ে হয়ে থাকে। যার ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ডে অধিক ব্যয় এর প্রবনতা দেখা যায় না। জনগনের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে কোন প্রকল্প উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না।
এ প্রকল্পের প্রতিটি কার্য সম্পাদিত হয়েছে আধুনিক সুবিধা বঞ্চিত দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর করতে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের উপকরন দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন করে গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, বাজার উন্নয়ন, স্কুলে ছাত্রীদের চেঞ্জ রুম, কমন রুম ও টয়লেট নির্মান, অন্ধকার রাতে সৌর বিদুতের আলো গ্রামীণ জনপথের মানুষের জন্য ইউজিডিপি প্রকল্প আর্শীবাদ বয়ে এনেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী-খামারী, কৃষক-মজুর জাইকার এ প্রকল্পের প্রশংসা করেছে এবং প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে।