সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন ও সেলিমের জন্য সহকর্মীদের দোয়া মাহফিল

প্রকাশিত: 6:28 am, January 5, 2025 | আপডেট: 6:28 am,

সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন ও সেলিমের জন্য সহকর্মীদের দোয়া মাহফিল

* সাংবাদিকদের স্মৃতিচারণে কাঁদলেন টিপু

* ওনারা অত্যান্ত মোহাব্বতের মানুষ ছিলেন: মাও. ফেরদাউসুর রহমান

 

হাতিম বাদশাহ: দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন ও ফটো সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সেলিমসহ প্রয়াত সকল সাংবাদিকদের রুহের মাগফিরাত কামনা দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (০৪ জানুয়ারী) বাদ জোহর শহরের মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায় এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত সাংবাদিকদের সহকর্মীরা এ দোয়ার আয়োজন করে।

 

দোয়া মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ্, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার সাবেক সভাপতি তাপস সাহা, হাবিবুর রহমান শ্যামল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সবুজ, সাংবাদিক শহিদুল্লাহ্ রাসেল ও মোজাম্মেল হক লিটন।

 

দোয়া মাহফিলে প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হওয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন তোফাজ্জল ভাই। তিনি আমার প্রতিটি কাজে পরামর্শ দিতেন। প্রতিদিন আমার সাথে একবেলা করে দেখা না করলে তার পেটের ভাত হজম হতো না। সেদিন সকালে যখন শুনলাম সাথে সাথে আমি সবুজকে (তোফাজ্জলের বড় ছেলে) কল করলাম, ও বললো ‘আব্বু কথা বলতে পারছেনা।’ যতদিন হসপিটালে ছিলো আমি প্রতিদিন সবুজের সাথে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তার জবান ছিলো না। ভাবতে পারিনি, তিনি এভাবে চলে যাবেন।

 

তিনি বলেন, তোফাজ্জল ভাই স্পষ্টবাদী ছিলেন। যেখানেই কোন সংবাদ পেতেন সাথে সাথে চলে যেতেন। এবং তিনি একজন ইসলামের সেবক ছিলেন। তিনি সত্যের পক্ষে ছিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি যাকে যাই বলতেন স্পষ্টভাষায় বলে দিতেন। তিনি একদম স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন। তিনি সাংবাদিক জগতে যে অবদান রেখে গেছেন, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। ওনার লেখনি খুবই বস্তুনিষ্ঠ ছিলো এবং ন্যায়ের পক্ষে ছিলো। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।

 

সেলিমের স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, সেলিম ছিলো একদম নরম মনের মানুষ। একটা ঠান্ডা প্রকৃতির সাংবাদিক ছিলো। দেখা হলেই সালাম দিতো। কখনো অভিমান করতো না। নয়ন, সুলতান চলে গেছে। আসলে ওরা আমাদের জন্য অনেক অবদান রেখেছে। কিন্তু আমরা ওদের জন্য কিছুই করতে পারেনি। কারণ, আপনারা জানেন বিগত আওয়ামী লীগের ষোলটি বছরে আমাদের জীবনটা রক্ষা করাটাই অনেক কঠিন ছিলো। ষোল বছরে ষোল ঘন্টাও বাড়ীতে ঘুমাতে পারেনি। শহরে চলাচল ঠিকই ছিলো কিন্তু বাড়ীতে থাকতে পারেনি। যাইহোক, আপনারা দোয়া করবেন আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকবো।

 

দোয়া মাহফিলে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, আপনারা যে পেশায় নিয়োজিত এর চাইতে উত্তম পেশা এ পৃথিবীতে কিছুই হতে পারেনা। সত্যকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা। এটা সবচাইতে বড় জিহাদ। একজন মানুষ ষড়যন্ত্রের শিকার, আপনারা ইচ্ছে করলে সেই মিথ্যে ষড়যন্ত্র থেকে তাকে উদ্ধার করে সত্যটাকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেন। এই যে বিষয় এটা অনেক বড় ইবাদত। এই ইবাদতে জড়িত ছিলেন আমাদের তোফাজ্জাল ভাই, আমাদের সেলিম ভাই। ওনারা অত্যান্ত মোহাব্বতের মানুষ ছিলেন। ওনারা দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটা মানুষ বলে ‘তারা ভালো মানুষ ছিলো।’ আমি এদের প্রত্যেকের জন্য দোয়া করি। আমাদের তরফ থেকে তাদের জন্য যতটুকু করার দরকার আমরা করবো।

 

মুফতি মাসুম বিল্লাহ্ বলেন, মৃত্যুর পর মানুষের সকল আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র পথ থাকে নেক দোয়া। যদি কোন নেক সন্তান তার জন্য দোয়া করে, ওটাই তার জন্য পৌছায়। আলহামদুল্লিাহ্ আমরা তাদের জন্য দোয়া করেছি। তোফাজ্জল ভাই, সেলিম, সুলতান যারাই ছিলো তাদের সবারই সমাজে একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিলো। হাসি-খুশি ছিলো, মিশুক ছিলো। কখনও কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। তাই আসুন আমরা সবাই তাদের জন্য দোয়া করি।

 

বক্তব্য শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে নেওয়াজ বিরতণ করা হয়।

 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, যমুনা টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আমির হুসাইন স্মিথ, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম জনি, দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মিলন বিশ্বাস হৃদয়, খবর নারায়ণগঞ্জের প্রকাশক জাহিদ হাসান, নির্বাহী সম্পাদক মশিউর রহমান, রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সুমন, দ্যা বাংলা এক্সপ্রেসের সম্পাদক উজ্জল হোসাইন, সিটি নিউজের বার্তা সম্পাদক জুয়েল রানা, ফটো সাংবাদিক মো: কাইয়ূম, দৈনিক যুগের চিন্তার ফটো সাংবাদিক মেহেদী হাসান, দৈনিক রূদ্রবার্তার ফটো সাংবাদিক আলী হোসেন টিটু, দৈনিক অগ্রবানী পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রিপন মাহমুদ, দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক হাবিব খন্দকার, সোলাইমান হোসেন ও প্রয়াত সাংবাদিক তোফাজ্জাল হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান সৌরভ, ফটো সাংবাদিক সেলিমের ছোট ভাই হৃদয় ও ছেলে মাহফুজসহ আরও অনেকে।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *