শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (অও) প্রভাব

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২৩ | আপডেট: ২:৩২ অপরাহ্ণ,

নাজনীন সুলতানা, সহকারী শিক্ষক : নিউটনের তৃতীয় সূত্র মতে প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ঠিক তেমনি প্রতিটি আবিস্কারের ভাল গুণের পাশাপাশি খারাপ দিক থাকবেই। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একবিংশ শতাব্দীর একটি বিস্ময়কর উদ্ভাবন।‘ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ এটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের সময়। ১৯৪০ সালে উদ্ভব হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সে সময় যুদ্ধে ব্যবহৃত জটিল জটিল কোড উদ্ধারে এটি ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ব্যবহার হয়ে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে ।

 

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের হোমটিউটরের জায়গা দখল করে নিয়েছে এ আই । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে তৈরি করতে পারছে। তাদের কোন শিক্ষকের সাহায্য প্রয়োজন হচ্ছে না। তাদের সময় কম লাগছে। অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েও নেই কোন দুঃশ্চিন্তা। যেকোন প্রজেক্ট ওয়ার্ক তারা মুহূর্তের মধ্যেই করতে পারছে। জটিল জটিল সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যেই। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে উত্তর প্রদান করে বিধায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর হয় নির্ভুল এবং গ্রহণযোগ্য।

 

শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য অনেক বেশি বই পড়ার প্রয়োজন হয় না বিধায় শিক্ষার্থীরা এখন এ আই এর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বলা হয় আলোর পাশে অন্ধকারের বাস। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীর স্কোর বাড়লেও কমে যাচ্ছে শিক্ষারমান মান। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীর মেধা ও সৃজন শীলতার বিকাশ। সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনের সকল প্রচেষ্টাই এখন ব্যর্থ হচ্ছে।

 

শিক্ষার্থীর ধরনের সাথে খাপ খাইয়ে পৃথক পৃথক উত্তর প্রদান করে বিধান শিক্ষক বুঝতেই পারেন না এটি ঐ শিক্ষার্থী নিজে করেনি। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীর সহায়ক হিসেবে এ আই কাজ করছে বিধায় বিষয় সম্পর্কে না বুঝেই শিক্ষার্থী ভাল স্কোর করলেও তার ঐ বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা থাকে না। এতে করে শিক্ষার্থীর সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক যাচাই করা যায় না। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে গাইড বই ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন যাতে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়। এ আই এর ব্যবহার সরকারের সেই মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের পথে একটি প্রতিবন্ধক।

 

তথ্য প্রযুক্তির যুগে এ আই এর ব্যবহারকে যেমন অস্বীকার করা যায় না তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে এর অপব্যবহারকেও মেনে নেয়া যায় না। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন- ‘‘আগত ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বদ্ধিমত্তা মানুষের দৌড়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে।” আবার ইলন মাস্ক বলেছিলেন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য সেরা এবং ভয়ংকর উভয়ই হয়ে দাঁড়াতে পারে”। তাই এ আই এর ব্যবহার শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ। নয়তো সত্যিই একদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে হার হবে মানব বুদ্ধিমত্তার।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *