খাদ্য পরিদর্শক পদে অনুত্তীর্ণদের পাস করিয়ে দেয়ায় যুগ্মসচিব সাময়িক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ যুগ্মসচিব ইফতেখার আহমেদকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। খাদ্য পরিদর্শক পদে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করল সরকার। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন উপপরিচালক) ইফতেখার আহমেদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর ৭ নম্বর মামলায় শাহবাগ থানার অভিযোগপত্র নং-৩৭/১(৩৩৯), তারিখ ২৭-০৯-২০২২ বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। যেহেতু, বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক উক্ত অভিযোগপত্র এবছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি গৃহীত হয়েছে; সেহেতু ইফতেখার আহমেদকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৩৯ (২) অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারী থেকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।
যে কারণে সাময়িক বরখাস্ত
জানা গেছে, খাদ্য পরিদর্শক পদের লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ প্রার্থী যিনি ১৯ পেয়েছেন তাকে ৯১ এবং ৪৮ পাওয়া প্রার্থীকে ৮৮ নাম্বার দিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। এভাবে বেশি নম্বর দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে অন্যায়ভাবে ৪৪ প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ করে দেওয়ায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গেল বছরের ১০ অক্টোবর বিশেষ জজ আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর চার্জশিটটি জমা দেন।
পরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কম্পিউটার সফটওয়্যারে কারসাজি করে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার বেশি নম্বর দেখিয়ে অন্যায়ভাবে ৪৪ প্রার্থীকে চাকরি লাভের অবৈধ সুযোগ করে দেন আসামিরা। অধিকতর তদন্ত শেষে মোট ৫০ জন আসামির বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে খাদ্য অধিদপ্তরের ৩য় শ্রেণির ১০ ক্যাটাগরিতে (খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সুপার ভাইজার, অডিটর, উচ্চমান সহকারী, হিসাব রক্ষক কাম ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর, সহকারী অপারেটর) এক হাজার ৫৫২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া বা কম নম্বর পাওয়া ৪৪ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার ওএমআর সিটে প্রাপ্ত নম্বরে জালিয়াতির মাধ্যমে বেশি বসিয়ে ৮০ ও তদূর্ধ্ব নম্বর দিয়ে ফল প্রকাশ করে। যেখানে আসামি ৪৩ জন পরীক্ষার্থীসহ মোট ৩২৮ জনকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মো. মনিরুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ও বাছাই কমিটির সদস্য রোকেয়া খাতুন, ঢাকা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) ও সরকারি কর্ম-কমিশন সচিবালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ফারুকীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও খাদ্য বিভাগের সাবেক উপ-সচিব নাসিমা বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও সাবেক উপ-পরিচালক (সংস্থাপন) ইফতেখার আহমেদ, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান, ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের ম্যানেজার মো. আইউব আলী, সাবেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও টেকনিক্যাল ম্যানেজার আসাদুর রহমান, সাবেক হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফ হোসেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাটাবেজ অ্যাডমিন মো. আবুল কাসেম।