তরমুজ ক্ষেতের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা!
মোঃজাহাঙ্গীর: ফসলের ক্ষেতজুড়ে গাঢ় সবুজ লতায় মোড়ানো তরমুজ গাছ। এই ক্ষেতের কোনো গাছে ফুল ফুটেছে। আবার কোনো গাছে ধরেছে ফল। সেই ফল দেখেই বুকে স্বপ্ন বেঁধেছিলেন কৃষক জহির মুন্সি। ভেবেছিলেন লাভবান হবেন, ধারদেনা পরিশোধ করবেন কিন্তু এক রাতেই যে তার সব স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাবে- তা কেইবা জানত!
সোমবার গভীর রাতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাদারবুনিয়া গ্রামে জহিরের ক্ষেতের প্রায় আড়াই হাজার তরমুজ গাছ উপড়ে নষ্ট করে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, কৃষক জহিরের এ ক্ষতির কথা শুনে ক্ষেতে এসে ভিড় করেছেন স্থানীয় লোকজন। আক্ষেপ করছেন উপড়ে ফেলা তরমুজ গাছ দেখে। এই ক্ষেত দেখে বোঝা যায়- একেকটি গাছ টেনে টেনে উপড়ে ফেলা হয়েছে। সেই গাছের কোনোটিতে ফুল এসেছে। কোনোটিতে ধরেছে ফলও।
স্থানীয় তরমুজ চাষিরা জানান, দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে সদর ইউনিয়নের পূর্ব নেতা গ্রামের বাসিন্দা জহির মুন্সি তরমুজ আবাদ করছেন। বছরে তার আয়ের উৎস এই তরমুজই। তাই প্রতিবছর এ সময়েরই অপেক্ষায় থাকেন তিনি। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এবারো ৫০ কড়া (১৫০ শতাংশ) জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা জহিরের সেই স্বপ্ন ম্লান করে দিয়েছে। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
তরমুজ চাষিরা বলছেন, এতে জহিরের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জহির মুন্সি (৫০) বলেন, অনেক পরিশ্রম করে ক্ষেতটা করছি। আমার সব স্বপ্ন মাটি হইয়া গেছে। আমার তো কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা নাই। সকালে (মঙ্গলবার) ক্ষেতে আইয়া (এসে) দেহি (দেখি) ২৫০০-২৬০০ গাছ উডাইয়া (উপড়ে) হালাইছে।
তিনি আরও বলেন, আমার গাছগুলো ভালো হইছে, এইটা দেখেই পাশের ক্ষেতের লোকজন আমার এ ক্ষতিটা করছে মনে হয়। আমি কেমনে এই ক্ষতি পোষামু। ধারদেনা করে তরমুজ দিছি। এখন কেমনে এই দেনা পরিশোধ করমু? আমি এর বিচার চাই।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। একজন কৃষকের পরিশ্রমের ক্ষেত এভাবে যারা নষ্ট করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।