পটুয়াখালীর গলাচিপায় অসময়ের বৃষ্টিতে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২৩ | আপডেট: ১১:১২ অপরাহ্ণ,

মোঃ নাসির উদ্দীন: পটুয়াখালীর গলাচিপায় অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির পানিতে চাষীরা এখন লোকসানের মুখে পড়েছে বলে জানা যায়। রবিবার (২ এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টির পানির কারণে কৃষকের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন তরমুজ, আলু, বাদাম, মুগ ডাল চাষিরা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন শেষ সময়ের জন্য তরমুজ বিক্রয়ের অপেক্ষায় থাকা কৃষকরা। রোপণকৃত তরমুজ গাছ ও ফলন পচে অধিকাংশ খামারিদের। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলায় এ বছর ৭৮০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। তরমুজ চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। অনেকে আগাম তরমুজের চাষ করায় সেই ক্ষেতের তরমুজ বাজারে বিক্রিও করেছেন। আর অধিকাংশ চাষির ফলনকৃত তরমুজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কেটে তা বিক্রি করার উপযোগী হওয়ার কথা। কিন্তু চৈত্র মাসের ভারী বর্ষণে তরমুজ চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টির পানিতে তাদের তরমুজ ক্ষেতগুলো তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও দুই একদিন স্থায়িত্ব হলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে কৃষক ও তরমুজ চাষিরা। এতে চাষিরা অন্তত শত শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে জানিয়েছেন।

 

এছাড়াও তরমুজ চাষীরা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এখন তারা মহা বিপাকে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে তরমুজ ক্ষেতগুলো তলিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অনেক এলাকায় বৃষ্টির সাথে শিলা পড়ার কারণে তরমুজ, আলু, বাদাম, মুগ ডাল নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে চাষিরা তাদের ক্ষেতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কাজ করেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুফল পাচ্ছে না।

 

উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের চর সুহরী গ্রামের মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে ফলনও ভালো হয়েছে। হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টির কারণে পানিতে তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ওই কারণে ফলন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ্যানজিও থেকে ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব তা জানি না।

 

এ দিকে আমার রবি শস্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে ভুক্তভোগী চাষিদের পথে বসতে হবে এবং কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। গোলখালী ইউনিয়নের সুহরী গ্রামের তরমুজ চাষি মো. তালেব প্যাদা বলেন, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টির কারণে তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গতকাল রাতে সেচ দিয়ে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন করেছি। অতিরিক্ত পানি জমে আছে তরমুজ ক্ষেতে। এতে গাছ ও তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে।

 

রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বাজারের বড় চৌদ্দকানী গ্রামের আমির হোসেন জানান, বৃষ্টিতে আমার ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি এখন পথে বসে যাব। সরকারের কাছে আমাদের এ ক্ষতিপূরণের জন্য সহযোগিতা কামনা করছি। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায় বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতসহ ঝড়ো বাতাসের প্রভাব থাকতে পারে। তবে দ্রুত আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

 

গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিসার আরজু আক্তার বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে দ্বিগুণেরও বেশী জমিতে তরমুজ ও আলু সহ অর্থকরী ফসল আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় কৃষকরা আতংকে রয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা মাঠে থেকে কাজ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছেন। যদিও দ্রুত ক্ষেত থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় গাছ ও ফল দুটোই পচে নষ্ট হয়ে যাবে এবং বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে।



একটি মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা আছে *